শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৮ অপরাহ্ন
নানা সংকট ও সমস্যার কারণে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে একের পর এক রোগী পালিয়ে যাচ্ছে। গত ১৭ দিনে ওয়ার্ড থেকে ২৮ জন করোনা রোগী পালিয়েছে।
বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। পালিয়ে যাওয়া অনেক রোগী ও স্বজনরা জানিয়েছেন, নানা সংকট ও সমস্যার কারণে রোগীরা ওয়ার্ড থেকে পালিয়েছেন। এরমধ্যে চিকিৎসাসেবায় অবহেলা, নিন্ম মানের খাবার সরবরাহ, বিনামূল্যে ওষুধ না পাওয়া ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ উল্লেখযোগ্য। এসব অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষ বলেছে, আতঙ্কের কারণে চিকিৎসাধীন রোগীরা ওয়ার্ডে দায়িত্বরতদের চোখ এড়িয়ে চলে যান।
হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ মার্চ থেকে সরকারি এই হাসপাতালে করোনা সন্দিগ্ধ রোগীদের চিকিৎসাসেবার জন্য আইসোলেশন ওয়ার্ড নামে আলাদা ইউনিট তৈরি করা হয়। বুধবার (১০ জুন) পর্যন্ত এখানে ২৪৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ৬ জন। তারা হলেন
যশোর শহরের নীলগঞ্জ এলাকার মিল্টন শিকদারের স্ত্রী সেলিনা খাতুন (৩০), ঝিকরগাছা উপজেলার বর্ণি গ্রামের শাহিনের স্ত্রী শাকিলা খাতুন (২৪), হায়াত আলীর স্ত্রী জোহরা বেগম (৫৫), গদখালী এলাকার ইব্রাহিম মল্লিকের ছেলে রুহুল কুদ্দুস (৭০), চৌগাছা উপজেলার জামিরা গ্রামের মৃত কানু মন্ডলের ছেলে রেজাউল ইসলাম (৬০) ও শার্শা উপজেলার শিয়ালকোনা গ্রামের মিজানুর রহমানের স্ত্রী জাহানারা বেগম (৬০)। এছাড়া গত ১৩ এপ্রিল থেকে ৭ জুন পর্যন্ত ২৮ জন নারী পুরুষ রোগী আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে পালিয়ে গেছেন। তারা হলেন যশোর শহরের মিশনপাড়ার ইতি কর্মকার (৫৫), খড়কি এলাকার সানজিদা ইসলাম (৪১), উপশহর সারথি মিল এলাকার রুনা (২৭), নীলগঞ্জ এলাকার মারিয়া (১৬), পুলিশ লাইন এলাকার শাহবুদ্দিন (২৯), পুরাতন কসবার সুমাইয়া (২০), বেজপাড়ার শায়লা খাতুন (৩০) , বেজপাড়ার মুহিত (১৪), সদর উপজেলার রাজাপুর গ্রামের জাহেদা বেগম (৬০), হাসিনা (৪০), পদ্মবিলা গ্রামের ইউসুফ আলী (২৫), পূর্ব পান্থাপাড়া সতিঘাটার আতিয়ার রহমান (৪০), খাজুরার সুমাইয়া খাতুন (২০), ঝুমঝুমপুর এলাকার মর্জিনা (২৩), এনায়েতপুর গ্রামের মুক্তা (২২), বসুন্দিয়ার মাহমুদা (২৫), শানু (২৭), মাহিদিয়া গ্রামের আঞ্জুরা খাতুন (১৮), বাঘারপাড়া উপজেলার খাজুরা গ্রামের সালমা খাতুন (২৫), মহিরন গ্রামের মুন্না (২০), ইন্দ্রা গ্রামের নিলুফা (২২), চৌগাছা উপজেলার লস্কারপুর গ্রামের নাজমা (২৮), ঝিকরগাছা উপজেলার কাটাখাল গ্রামের মনিরা (২২), শার্শা উপজেলার সেলিনা (৩৫), বেনাপোলের কাগমারি গ্রামের সালমান (২১)মণিরামপুর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের হাজেরা বেগম (৬৫), ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মামুন (২৫) ও নড়াইল সদর উপজেলার দত্তপাড়া গ্রামের সুরাইয়া (১৯)।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে কয়েকজন রোগী জানিয়েছেন, হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ড নামমাত্র। এখানে চিকিৎসাসেবা নেই বললে চলে। ঠিকমতো চিকিৎসক রাউন্ডে আসেন না। চিকিৎসক সেবিকা তাদের অবহেলার চোখে দেখেন। নোংরা পরিবেশে থাকতে দেয়া হয়। পরিছন্নকর্মীও ঠিকমতো ওয়ার্ড পরিস্কার করেন না। খাবারের মান একেবারেই নিন্ম মানের। সকালের নাস্তা, দুপুরের ও রাতের খাবারে অল্প পরিমাণে খাবার দেয়া হয়। মাছ মাংস দেয়া হয় নামমাত্র। এছাড়া খাবার পানির তীব্র সংকট। কষ্ট সহ্য করতে না পেরে তারা পালিয়ে এসেছেন।
এক রোগীর স্বজন আশাদুল ইসলাম জানিয়েছেন, এখানে রোগীদের দেখভালের জন্য চিকিৎসকরা দায়িত্বে আছেন খাতা কলমে। অধিকাংশ সময় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের খুঁজে পাওয়া যায় না। এর সত্যতা নিশ্চিত হতে অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিগত দিনে আইসোলেশন ওয়ার্ডে বিনা চিকিৎসায় দুইজন রোগী মারা গেছেন। এরমধ্যে মৃত রেজাউল ইসলামের স্বজনরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের এক কর্মচারী জানিয়েছেন, সামান্য জ্বর সর্দি হলে রোগীকে ভর্তি করে আইসোলেশন ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেয়া হয়। দুই একদিন পর সুস্থতা অনুভব হলে রোগীরা নিজেদের ইচ্ছায় বাড়ি চলে যান। কারণ নমুনা পরীক্ষার ফলাফল না আসা পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে অধিকাংশ রোগীর ছাড়পত্র দেয়া হয়না। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আরিফ আহমেদ জানিয়েছেন, রোগীদের সব অভিযোগ ঠিক না। প্রতিদিন আইসোলেশন ওয়ার্ড পরিস্কার করার জন্য নির্দিষ্ট কর্মী রয়েছেন। খাবারের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেখানে রোস্টার অনুযায়ী চিকিৎসকরা দায়িত্ব পালন করে থাকেন। বিনামূল্যে ওষুধ দেয়ার জন্য দায়িত্বরতদের বলা আছে। তারপরেও অভিযোগগুলোর খোঁজ নেয়া হবে। আরএমও আরো জানান, করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়ার পর থেকে রোগীদের মনে এক ধরণের ভয় ও আতঙ্ক কাজ করে। সবাইতো আর করোনা নিয়ে ভর্তি হয়না। আতঙ্কের কারণে অনেকে ওয়ার্ড থেকে পালিয়ে যান।