বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ১০:০৬ অপরাহ্ন
ড. ইউনুস কে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি-লিট ডিগ্রি প্রদান
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়,গৌরবের দুটি বড় কারণ বললেন ড. ইউনূস
মোঃ শাহরিয়ার রিপন ঃ- চট্টগ্রাম
অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) যখন নিজের পরিচয় দেয় তখন হয়তো বলে ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছে’। একই সাথে ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয় গৌরববোধ করে যে আমি তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম।
বুধবার (১৪ মে) দুপুর ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মাঠে আয়োজিত চবির ৫ম সমাবর্তনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. ই্উনূস এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গৌরব করার বড় দুটি কারণ রয়েছে। নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্তির গোড়াপত্তন বা এর যে কর্মসূচি তা শুরু হয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এছাড়া এই বিশ্ববিদ্যালয় গৌরববোধ করতে পারে যে আমি শুধু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলাম না, পাশের গ্রামের ছাত্রও ছিলাম। সেই জায়গা থেকে চবি বলতেই পারে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছে।’
সমাবর্তনে প্রধান উপদেষ্টাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে
ডি-লিট ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এছাড়া ৪২ জনকে পিএইচডি ও ৩৩ জনকে এমফিল ডিগ্রি প্রদান করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
দীর্ঘ বছর পর দেশের সর্ববৃহৎ চবির সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা ২২ হাজার ৬৮৬ জন শিক্ষার্থী।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার, বাংলাদেশ মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস. এম এ ফায়েজ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার।
আরো উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন, শিক্ষকসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠা হয়৷ এরপর ১৯৯৪ সালে প্রথম সমাবর্তন, ১৯৯৯ সালে দ্বিতীয়, ২০০৮ সালে তৃতীয় এবং সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়।
ডি—লিট পেলেন ‘চবির ইউনূস’
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে সম্মানসূচক ডক্টরেট অফ লিটারেচার (ডি—লিট) ডিগ্রি দিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
বুধবার (১৪ মে) দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত সমাবর্তনে এই ডিগ্রি তুলে দেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার।
চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতারের সভাপতিত্বে সমাবর্তনে প্রধান অতিথি ও সমাবর্তন বক্তা ছিলেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস. এম. এ. ফায়েজ। এছাড়া স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, মুক্তিযোদ্ধা উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীক এবং বিদ্যুৎ ও খনিজ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, চবি উপ- উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথি ও সমাবর্তন বক্তা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় দ্রত শেষ হয়ে যায়। আপনাদের জীবনের একটা অধ্যায় শেষ তবে নতুন জীবনের শুরু। বহু বছর পর ক্যাম্পাসে ফিরে আসা সত্যিই আনন্দের। শিক্ষক হিসেবে অতি উৎসাহ সহকারে দায়িত্ব পালন করেছি। গ্রামীণ ব্যাংক তৈরি হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে। পৃথিবীর ভবিষ্যৎ আমাদের হাতে; আমরা কি ধরনের বিশ্ব, সমাজব্যবস্থা এবং শিক্ষাব্যবস্থা চাই সেটাই মূখ্য ‘
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এখানে শিক্ষক হিসেবে এসেছিলাম। তবে যতই দিন গিয়েছে ছাত্র হয়ে গিয়েছি। আমি বলেছিলাম ঋণ মানুষের মানবিক অধিকার। অর্থনীতির ভিত্তি হবে মানুষ। কোনোদিন নোবেল পাবো এটা মনে আসেনি। এই বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে।’
সমাবর্তনের সভাপতি ও চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, ‘আমরা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে ডি—লিট ডিগ্রি প্রদান করেছি। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। মুহাম্মদ ইউনূসের জীবনের অর্জনগুলোর সাথে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক রয়েছে। আজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গৌরবোজ্জ্বল দিন। প্রধান অতিথি এবং শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে দিনটি পূর্ণতা পেয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা তেমন হচ্ছে না। মনে রাখতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক প্রতিষ্ঠান, এটি শুধু রাজনীতির জায়গা নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ রাজনৈতিক নেতা তৈরি করা নয়, যোগ্য গ্রাজুয়েট তৈরি করা। আমাদের অনেক শিক্ষক অ্যাকাডেমিক কাজে গুরুত্ব না দিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেন। এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষতির সম্মুখীন হন।’