শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০২:০০ অপরাহ্ন
সরকারি-বেসরকারি নাবিকদের সমান সুযোগ দাবি বেকার নাবিকদের
ডেক্স নিউজ ঃ- ৩ সেপ্টেম্বর
সার্টিফিকেট প্রাপ্ত ফ্রেশার নাবিকদের নিয়োগ প্রদান, বাংলাদেশী পতাকাবাহী জাহাজে পদসৃষ্টি, সরকারি-বেসরকারি নাবিকদের মধ্যে বৈষম্য রোধ করা, জাহাজে নাবিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ ১৫ দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বেসরকারি মেরিটাইম ইনস্টিটিউট থেকে পাশ করা বেকার নাবিকরা। আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় রাজধানীর মেহেরবা প্লাজায় এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
বৈষম্যবিরোধী নাবিক আন্দোলনের ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলনের সমন্বয়ক সাব্বির হোসেন বলেন, সরকারি ও বেসরকারি মেরিন একাডেমিতে সবাই একই ধরণের কোর্স করানো হয়। আমাদের পাঠ্য কারিকুলামও একই ধরণের। কিন্তু চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্য তৈরি করা হচ্ছে। অনেকদিন ধরে বিদেশী পতাকাবাহী জাহাজে সবাই সুযোগ পেলেও বাংলাদেশী পতাকাবাহী জাহাজে শুধুমাত্র সরকারি একাডেমি থেকে পাশকৃতরা পাচ্ছে। এটা আমাদের প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে। আজকে আমরা ১৫টি দাবি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করছি। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে বৈষম্যরোধ করে সবার সমান সুযোগ দাবি করছি।
এসময় বৈষম্যবিরোধী নাবিক আন্দোলনের সমন্বয়ক ইমরান শেখ, সৌরভ মন্ডল, মো. আব্দুল আলিম, সজীব রানা, হৃদয় চন্দ্র সুপ্তধরসহ বিভিন্ন বেসরকারি মেরিন একাডেমির সাবেক শিক্ষার্থীরা।
তাদের ১৫ দফা দাবি হল-
১. সিডিসিপ্রাপ্ত ফ্রেশার নাবিকদের জাহাজে নিয়োগ নিশ্চিত না করা পর্যন্ত নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর থেকে সকল ধরনের সরকারি ও বেসরকারি মেরিন একাডেমিদের রেটিংস ও ক্যাডেট ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে এবং বন্ধ কৃত একাডেমি ও সকল ফ্রেশার নাবিকদের চাকুরীর দায়িত্ব ডিজি শিপিং বহন করিবেন।
২. BANGLADESH MERCHANT SHIPPING (MLC IMPLEMENTATION) REGULATION 2020 Part-3 এর Paragraph-8(2) এ উউল্লেখ্য মান আইনটি হলো- The Government Shipping Office shall provide seafarer recruitment and placement service in Bangladesh for Bangladeshi seafarers seeking employment in Bangladesh flag or foreign flag ships and shall ensure that the service is operated in an orderly manner that protects and promotes seafarers’ employment rights as provided in the MLC) উল্লেখিত আইনে কোন প্রকার বৈষম্য না থাকা সত্যেও নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর সরকারি ও বেসরকারি নাবিকগনের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করেছেন। অতএব সরকারি ও বেসরকারি একাডেমির রেটিংস বা ক্যাডেটদের মধ্যে কোন প্রকার বৈষম্য না রেখে সবার জন্য দেশিয় পতাকাবাহী জাহাজ উন্মুক্ত করতে হবে এবং সাধারন রোস্টারের নাবিক নিয়োগ আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী এর যথার্থ প্রয়োগ থাকতে হবে।
৩. বাংলাদেশি পতাকাবাহী সকল জাহাজে জুনিয়র ETO/Trainee ETO পদ বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৪. নাবিকগন যে কোম্পানিতে/এজেন্সিতে রোস্টারভুক্ত থাকিবেন সেই এজেন্সিকে সাইন অফ করার সর্বোচ্চ ৩মাসের মধ্যে পুনরায় জাহাজে নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
৫. অবসরপ্রাপ্ত এক্স নেভী থেকে শুরু করে আইডি হোল্ডার এবং স্পেশাল ব্যাচ নামক যে নাবিকদের সিডিসি প্রদান করা হচ্ছে এই ধরনের ব্যাচ চিরস্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষনা করতে হবে।
৬. অবৈধভাবে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশের ক্যাডেটগন বিদেশি কোম্পানিগুলোতে তাদের ওয়াচকিপিং সার্টিফিকেট দিয়ে রেটিংসের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন পদে প্রায় ৫০%শতাংশ জায়গা দখল করে আছে যা একান্তই রেটিংসদের অধিকার। ক্যাডেটগন জাহাজে নিয়োগপ্রাপ্ত হন একজন Trainee অফিসার হিসেবে আর একজন Trainee ক্যাডেটকে অভিজ্ঞতা অর্জনের পর ওয়াচকিপিং সার্টিফিকেট দিয়ে তাকে বিভিন্নপদে অবৈধভাবে চাকুরীর সুযোগ করে দিচ্ছেন নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর, যা রেটিংস সিডিসিধারি নাবিকদের রেটিংস পদে চাকুরির জন্য পদ সংকট দেখা দিচ্ছে। এই অনিয়মের বিরুদ্ধে দ্রুততম সমাধান চাই।
৭. COP online Exam system শুধুমাত্র MCQ এর মাধ্যমে সম্পুর্ন করতে হবে, নেটওয়ার্ক সিস্টেম ও সার্ভারকে ২৪ঘন্টা সচল রাখতে হবে,ডাক্তার দারা চক্ষু পরিক্ষা সম্পন্ন করলে ডিজি থেকে আর কোন চক্ষু পরিক্ষা নিতে পারবেননা। সেই সাথে DG Shipping এবং Shipping office-এ সকল ধরনের নাবিকদের দালাল ও কর্মকর্তা/কর্মচারী দ্বারা হয়রানি, জটিলতা,অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
৮. বাংলাদেশি নাবিকদের জন্য বিদেশি জাহাজে চাকুরির সুযোগ সম্প্রসারণ, সহজিকরণ ও এয়ারপোর্টে জটিলতা এবং হয়রানি ছাড়াও ভিসা জটিলতা নিরসনে দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে।
৯. অনুমোদিত সি-সার্ভিস সম্পন্ন করার পরে যদি কোন নাবিক বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে COC নিয়ে আসেন তাহলে তাদের অফিসার সিডিসি প্রদানে সহজ করার লক্ষ্যে ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে হয়রানি ব্যতীত NOC প্রদান করতে হবে।
১০. প্রত্যেক এজেন্সিতে সার্ভিস চার্জ নামক যে রাহাজানি আর দুর্নীতি সক্রিয়মান এই দুর্নীতি প্রত্যাহারে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
১১. প্রত্যেক জাহাজ কোম্পানির মালিকগনকে নাবিকদের জন্য করা নিজস্ব ইন্সুইরেন্স পলিসি এজেন্সির মাধ্যমে জাহাজে যোগদানের পূর্বে চুক্তিপত্রের সাথে যুক্ত না করে আলাদাভাবে নাবিকগনকে হস্তান্তর করতে হবে।
১২. জাহাজে কোন প্রকার সাপ্তাহিক ছুটি না থাকা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক বা জাতীয় যে সকল দিবসে ছুটি গুলো থাকে সেগুলো থেকেও জাহাজের নাবিকরা বঞ্চিত থাকে তাই দেশীয় জাহাজে জাতীয় সরকারি দিবসের ছুটির তালিকা অনুযায়ী প্রত্যেকটা ছুটি কার্যকর করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
১৩. জাহাজে সিনিয়র অফিসার বা ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা জুনিয়র নাবিকদের উপর অতিরিক্ত ডিউটি ছাড়াও যে পরিমান মানুষিক এবং শারিরিক নির্যাতন করা হয় তাতে নাবিক এবং দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের অধিকারকে ক্ষুন্ন করা হয়। এই সমস্ত বিষয়ে কোন নাবিক অভিযোগ করলেও তাকে বিভিন্ন ভাবে হেনস্তা করা হয় এই ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে দ্রুততম আইন প্রয়োগের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
১৪. নাবিকদের জাহাজে থাকা অবস্থায় প্রতি মাসে বেতনের ৩০%শতাংশ ক্যাশ দিতে হবে এবং সকল বেতন নাবিকদের একাউন্টে ডলারে প্রদান করা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
১৫. নাবিকরা জাহাজ থেকে সাইন অফ করার সময় জাহাজের অনবোর্ড কেপ্টেন নাবিকদের বেতনের সব ধরনের বকেয়া টাকা কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়া ডলারে পরিশোধ করিতে বাধ্য থাকিবেন।