বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩৫ পূর্বাহ্ন
খোলা চিঠি-
চট্টগ্রামে এমআরপি পাসপোর্ট ইস্যুর ক্ষেত্রে বিড়ম্বনার বিষয়ে
দৃষ্টি আকর্ষণঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মাননীয় প্রবাসী কল্যান মন্ত্রী, মাননীয় স্বরাষ্ট্র সচিব, মাননীয় চেয়ারম্যান- দুর্নীতি দমন কমিশন, মাননীয় মহাপরিচালক বাংলাদেশ পাসপোর্ট।
বিষয়: চট্টগ্রাম চান্দগাঁও পাসপোর্ট অফিসে এমআরপি পাসপোর্ট ইস্যু করার ক্ষেত্রে উপ-পরিচালকের অনিহা ও প্রতিদিন আনুমানিক ১০ লক্ষ টাকা ঘুষ বাণিজ্য বিষয়ে তদন্ত করার অনুরোধ প্রসঙ্গে।
বরাবর
উল্লেখিত সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ
অত্যন্ত দু:খের সাথে বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, উপরোল্লেখিত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রী মহোদয় ও স্বরাষ্ট্র সচিব, চেয়ারম্যান- দুর্নীতি দমন কমিশন এবং বাংলাদেশের পাসপোর্টের মহাপরিচালক এর দৃষ্টি আকর্ষন করে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে চট্টগ্রামে প্রবাস থেকে আগত রেমিটেন্স যোদ্ধা প্রবাসীদেরকে এনআইডি কার্ডের অজুহাত দেখিয়ে চট্টগ্রাম চান্দগাঁও (পাঁচলাইশ) আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক তারেক সালমান এমআরপি পাসপোর্ট ইস্যু করার ক্ষেত্রে অনিহা ও বিভিন্ন পন্থা দেখিয়ে হয়রানিকরণ বিষয়ে ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের সচেতন মহলের নজরে এসেছে।
এই সমস্যা পরিত্রানের জন্য আজকের চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের পক্ষ থেকেআবেদন করছি।
বিস্তারিত-
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম যোগানদাতা প্রবাসে রেমিটেন্স যোদ্ধারা বিভিন্ন দেশে বছরের পর বছর গায়ের শ্রম দিয়ে বাংলাদেশে অর্থ পাটাচ্ছে। তারা বিদেশে অবস্থান করার দরুন অনেকেই বাংলাদেশের ন্যাশনাল আইডি কার্ড (এনআইডি) সংগ্রহ করতে পারেনাই। বর্তমান সরকার এমরআরপি পাসপোর্টকে নিরউৎসাহিত করে বিশ্বের উন্নত দেশের সাথে তাল মিলিয়ে ই-পাসপোর্ট প্রদান করে যাচ্ছে। তার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। কিন্তু ই-পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে হলে নিজের এবং পরিবারের এনআইডি কার্ড জমা করা বাধ্যতা মূলক। এনআইডি কার্ড ব্যতিত ই-পাসপোর্ট পাওয়ার কোনভাবে সম্ভব নয়। কারণ এই পাসপোর্ট তৈয়ার করার ক্ষেত্রে যে সফ্টওয়ার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে তাতে এনআইডি কার্ড বাধ্যতা মূলক। এনআইডি কার্ডের অনুকূল ব্যতীত ই-পাসপোর্ট ইস্যু করতে পারে না পাসপোর্ট কতৃপক্ষ। এখানে দু:খের সাথে বলতে হয় যে, যেসব প্রবাসীরা বিদেশ থেকে এসে আবার বিদেশে ফেরত যেতে হলে পাসপোর্টের মেয়াদ থাকতে হবে। মেয়াদের মধ্যে যথাসময়ে যথানিয়মে বিদেশস্থ কর্মস্থলে ফেরত যেতে হবে। যখন মেয়াদউত্তির্ণ্য পাসপোর্ট দিয়ে বিদেশে ফেরত যাওয়ার কোনভাবে সম্ভব নয় তখন এমআরপি পাসপোর্টের জন্য আবেদন নিয়ে চান্দগাওঁ (পাঁচলাইশ) পাসপোর্ট অফিসে গেলে বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। এমআরপি পাসপোর্টের বদৌলতে আরেকটি এমআরপি পাসপোর্ট ইস্যু করতে হলে যেসব শর্ত দেওয়া হয়, সব শর্ত মেনে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করলেও বড় অংকের ঘুষ ব্যতীত এমআরপি পাসপোর্ট পাওয়া যায় না। অন্যদিকে এনআইডি কার্ড পাওয়ার জন্য আবেদন করলে এনআইডি কার্ড পেতে দীর্ঘ মাস সময় লেগে যায়। ভুক্তভোগী প্রবাসীরা এনআইডি কার্ডের জন্য আবেদন করে আবেদনের রশিদসহ প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র জমা দেওয়ার পরও উপ-পরিচালক তারেক সালমান সরকারের দোহায় দিয়ে এমআরপি পাসপোর্ট ইস্যু থেকে বিরত থাকেন। অন্যদিকে দালালদের মাধ্যমে সাংকেতিক চিহ্ন দিয়ে বড় অংকের ঘুষ প্রদানের মাধ্যমে এমআরপি পাসপোর্ট সহজে পাওয়া যায়। পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিসে প্রতিদিন আনুমানিক ১০ লক্ষ টাকার মত ঘুষ বাণিজ্য চলতে থাকে। প্রতিটি ই-পাসপোর্টের অনুকূলে ১৫০০ টাকা, জমার ক্ষেত্রে লাইন না ধরার জন্য ৮০০ টাকা, পাসপোর্ট ডেলিভারির ক্ষেত্রে লাইন না ধরার জন্য ৫০০ টাকা, বয়স পরিবর্তন থাকলে দিতে হয় অন্ততপক্ষে ১০,০০০ টাকা, নামের ত্রæটি থাকলে দিতে হয় প্রতি পাসপোর্টে ৫,০০০ হাজার টাকা, কর্ম সংস্থানের পদবীর সাথে প্রত্যয়ন পত্র না দিলে পরিশোধ করতে হয় ২,০০০ টাকা, দালাল ব্যতীত কোন মানুষ সরাসরি চাঁন্দগাও পাসপোর্ট (পাঁচলাইশ) অফিসে গেলে বিভিন্ন অজুহাতে দিনের পর দিন ঘোরাতে থাকে। যা অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। এই বিষয়ে বিভিন্ন ইলেক্ট্রিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া, অনলাইনসহ অসংখ্য বার লেখালেখি এবং সংবাদ প্রকাশিত হলেও কোনধরনের সমস্যা সমাধানের সুরাহা হয়নি। পাসপোর্ট অফিসে গেলে প্রবাসীদের এমআরপি পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য আহাজারী দেখলে যে কোন মানবিক মানুষের কান্না চলে আসবে। এমআরপি পাসপোর্ট ইস্যুর বিষয়ে সব শর্ত মেনে পাসপোর্ট ইস্যু করার জন্য চট্টগ্রাম বিভিগীয় পাসপোর্ট অফিসার সাঈদ আহমদকে অবগত করলে তিনি বলেন, কাগজপত্র ঠিক থাকলে একজন প্রবাসী বা মুমূর্ষ রোগী জরুরী ভিত্তিতে এমআরপি পাসপোর্ট ইস্যু করার জন্য আমার নির্দেশনা রয়েছে। সরকার প্রবাসীদেরকে সকল ধরনের সুবিধা দেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। এমআরপি পাসপোর্ট হয়ত হাতে লেখা পাসপোর্টের মত একেবারে উঠে যাবে পর্যায়ক্রমে। কিন্তু এখনপর্যন্ত এমআরপি পাসপোর্ট ইস্যুকরণ বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা রয়েছে। বাংলাদেশের বাইরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমাদের ভিসা অফিস রয়েছে সেইসব অফিসের এখনও এমআরপি ব্যতীত ই-পাসপোর্ট ইস্যু করা হচ্ছে না। তাই আমাদের বাংলাদেশেও প্রতিটি পাসপোর্ট অফিসে প্রবাসী ও মুমূর্ষ রোগীদের জন্য জরুরী ভিত্তিতে এমআরপি পাসপোর্ট ইস্যু করার নিয়ম বলবৎ রয়েছে। আমাদের চট্টগ্রামবাসীর দাবী হচ্ছে যে, চট্টগ্রামের বেশিরভাগ মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছে। তাঁরা চট্টগ্রামে এসে মেয়াদ উর্ত্তীণ্য এমআরপি পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য চান্দগাঁও (পাঁচলাইশ) পাসপোর্ট অফিসকে সু-স্পস্টভাবে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য যদি এমআরপি পাসপোর্ট সরকার ইস্যু করার ক্ষেত্রে বন্ধ করে দেন তা সরকারি গেজেটের মাধ্যমে জানাতে হবে। অন্যদিকে এনআইডি কার্ড সহজ উপায়ে পাওয়ার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিতে হবে। চট্টগ্রাম সচেতন মহল ও সাধারণ মানুষের অনুরোধের প্রেক্ষিতে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ উল্লেখিত মন্ত্রী ও সচিব, চেয়ারম্যান- দুর্নীতি দমন কমিশন এবং বাংলাদেশ পাসপোর্টের মহাপরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষন করে বিনিতভাবে আবেদন করছি যে, চান্দগাঁও (পাঁচলাইশ) পাসপোর্ট অফিসকে দূর্নীতি মুক্ত ও এমআরপি পাসপোর্ট ইস্যুর ক্ষেত্রে প্রবাসীদেরকে হয়রানীর হাত থেকে রক্ষা করা জন্য পাশপাশি সকল অনিয়মের বিষয়ে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে আমাদের অভিযোগ বিষয়ে তদন্ত করে অপরাধিদের বিরুদ্ধে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবী জানাচ্ছি।
পরিশেষে আমরা চট্টগ্রামবাসী আশা করব এই খোলা চিঠির মাধ্যমে চান্দগাঁও (পাঁচলাইশ) পাসপোর্ট অফিসের অনিয়মের বিষয়ে সোচ্চার হয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য এগিয়ে আসবেন। অন্যদিকে সকল সম্মানিত কলম সৈনিক বন্ধুরা এই অনিয়মের বিরুদ্ধে কলম ধরে সরকারের নজরে আনার বিনিতভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।
নিবেদক
মো. কামাল উদ্দিন
লেখক/সাংবাদিক/গবেষক/টেলিভিশন উপস্থাপক
মহাসচিব
চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম