শনিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২০ অপরাহ্ন
অক্সফোর্ড ক্যাডেট হাইস্কুলের নতুন ভবন উদ্বোধন
ডেক্স নিউজঃ-
ঢাকার কদমতলীতে সিটি করপোরেশন ৫৮ নাম্বার ওয়ার্ড এলাকায় ২৪ফুট নামক স্থানে বটতলার একটি আধুনিক বাড়িতে আজ ২৬ নভেম্বর অক্সফোর্ড ক্যাডেট হাইস্কুলের নতুন ভবন উদ্বোধন হয়েছে। স্থানীয় কাউন্সিলর শফিকুর রহমান সাইজুল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন নতুনধারা ফাউন্ডেশন নির্বাহী পরিচালক এবং দৈনিক সকালের সময়ের বিশেষ প্রতিনিধি শামীম আহমদ। সকাল ১১টায় শামীম আহমদ সেখানে উপস্থিত হলে তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। স্কুলের প্রধান শিক্ষক হারুন-অর রশিদের নেতৃত্বে স্কুলের সকল শিক্ষক তখন উপস্থিত ছিলেন। সেখানে উপস্থিত শিশুশিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য শামীম আহমদ তার বক্তব্যে বলেন- ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আইয়ুব খান জোর করেই দেশের ক্ষমতা দখল করে শেখ মুজিবসহ বহু নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে জেলে আটকে রাখেন। পাঁচ বছরের জন্য পুরো দেশে রাজনীতি বন্ধ করে দিলে গ্রেপ্তার হওয়ার পূর্বমুহূর্তে শেখ মুজিবুর রহমান তরুণদের এক যুগান্তকারী নির্দেশ দিয়ে গেলেন। বললেন, “এই পাঁচ বছর তোমরা শিশু সংগঠন কচি-কাঁচার মেলার মাধ্যমে কাজ করো। নিজেদের সচল রাখো।” বঙ্গবন্ধু জানতেন, শিক্ষা, সংস্কৃতি চর্চা, খেলাধুলার মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক চেতনা, দেশ ও মানুষকে ভালোবাসার মানসিকতা বিকাশে শিশুরা নিজেদের সুনাগরিক হিসেবে বেড়ে ওঠাবে। একাত্তরে দেশ স্বাধীন হলে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালের ২১ শে জুন শিশু আইন ১৯৭৪ স্বাক্ষর করেন এবং ২২ শে জুন তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। এই আইনের মাধ্যমে শিশুদের নাম ও জাতীয়তার অধিকারের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। শিশুদের প্রতি সব ধরনের অবহেলা, শোষণ, নিষ্ঠুরতা, নির্যাতন, খারাপ কাজে লাগানো ইত্যাদি থেকে নিরাপত্তার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন- আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। ভবিষ্যতে দেশ গড়ার নেতৃত্ব দিতে হবে আজকের শিশুদেরই। তাই শিশুরা যেন সৃজনশীল, মননশীল এবং মুক্তমনের মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে-তিনি সব সময় সেটাই চাইতেন। অহিংসা দিয়ে, মানবপ্রেম দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে সমাজে যে আদর্শ বঙ্গবন্ধু নির্মাণ করে গেছেন তার মৃত্যু নেই, ক্ষয় নেই।
শামীম আহমদ বলেন শিশুবয়সে নির্জীব শিক্ষার মতো ভয়ংকর ভার আর কিছুই নাই, তাহা মনকে যতটা দেয় তাহার চেয়ে পিষিয়া বাহির করে অনেক বেশি। বিদ্যা যে দেবে এবং বিদ্যা যে নেবে তাদের উভয়ের মাঝখানে যে সেতু সেই সেতুটি হচ্ছে ভক্তি ও স্নেহের। একটি বিদ্যালয়ের সর্বস্তরের লোকদের নিয়ে তৈরি হয় একটি পরিবার। সেই পরিবারের সম্বন্ধ যদি কেবল শুষ্ক কর্তব্য বা ব্যবসায়ের হয়, তা হলে যারা এই পরিবারটিকে পায় তারা হতভাগ্য। তবে অক্ষম লোকেরাই ভাগ্যের উপর নির্ভর করে। নিজের প্রতি সুমহান আস্থা আছে। বিদ্যালয়টি শক্ত হাতে ধরলে। নিশ্চয়ই এই পরিবারের বন্ধন সুদৃঢ় হবে। “স্কুল, কলেজে শেখা অঙ্ক, ইতিহাস, ভূগোল ইত্যাদি সমস্ত ভুলে যাওযার পর, যা বাকি থাকে তা হলো শিক্ষা।”
স্কুলের শিক্ষকদের উদ্দেশ্য করে শামীম আহমদ বলছেন- আপনারা শিশুদের আত্মার আলো জ্বালিয়ে দেবেন, সেই আলোতে শিশু সত্যিকারের মানুষ হবে। তিনি আরো বলেন, মানুষের আলো জ্বালায় তার আত্মা, তখন ছোটো হয়ে যায় তার সঞ্চয়ের অহংকার৷ জ্ঞানে-প্রেমে-ভাবে বিশ্বের মধ্যে ব্যাপ্তি দ্বারাই সার্থক হয় সেই আত্মা৷ গতানুগতিক ধারার শিক্ষা দিয়ে শিশুর মননের বিকাশ সম্ভব নয়। আত্মশক্তিতে বলীয়ান করে গড়তে হবে শিশুদের। ক্লাসের পরে ক্লাস পরিবর্তন করে কেবলই পুস্তক মুখস্থ করে বড় হলে সামান্য কোম্পানির চাকর হওয়া যায়। মানুষ হওয়া যায় না। মনে রাখবেন “কলস যত বড়ই হউক না, সামান্য ফুটা হইলেই তাহার দ্বারা আর কোনো কাজ পাওয়া যায় না। তখন যাহা তোমাকে ভাসাইয়া রাখে তাহাই তোমাকে ডুবায়।” তাই শিশুকাল থেকেই শিশুকে মানবিক চর্চার মাধ্যম সুশিক্ষিত করতে তাগিদ দিয়ে বলছেন অক্সফোর্ড ক্যাডেট হাইস্কুলের শিক্ষার্থীদের সুন্দর আদর্শ, ন্যায়পরায়নতা, ত্যাগ ও শিষ্টাচার সমাজকে আলোকিত করবে।
থানা শিক্ষা অফিসার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ছাড়াও বাংলাদেশ কিন্ডারগার্ডেন স্কুল সমিতির নেতারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।