রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:২৫ পূর্বাহ্ন
জামালখান এলাকার চাঞ্চল্যকর ৭ বছরের শিশুর লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন এবং হত্যাকান্ডে জড়িত ০১ জন গ্রেফতার
ডেক্স নিউজঃ- সিএমপি মিডিয়া
ভিকটিম মারজানা হক বর্ষা (৭) ইং ২৪/১০/২০২২ তারিখ বিকাল অনুমান ০৪.৩০ ঘটিকার সময় কোতোয়ালী থানাধীন জামালখান লিচু বাগানস্থ সিকদার হোটেলের পাশের গলির বাসা হইতে চিপস ক্রয়ের জন্য গলির মুখে দোকানে যায়। ৩০ মিনিট অতিবাহিত হওয়ার পরও ভিকটিম দোকান থেকে বাসায় ফিরে না আসায় ভিকটিমের পরিবারের সদস্যরা আশপাশ এলাকা সহ সম্ভাব্য স্থানে ব্যাপক খোঁজাখুঁজি করে। খোঁজ না পাইয়া পরদিন ভিকটিমের বোন ছালেহা আক্তার রুবী থানায় হাজির হয়ে তার ছোট বোন ভিকটিম মারজানা হক বর্ষা (৭) নিখোঁজ সংক্রান্তে অফিসার ইনচার্জ বরাবর সাধারণ ডায়েরী করার আবেদন করিলে কোতোয়ালী থানার জিডি নং-২০০৩, তাং-২৫/১০/২০২২ইং মূলে লিপিবদ্ধ করে এসআই/সুজন দাশ এর নিকট তদন্তভার অর্পন করা হয়। এসআই/সুজন দাশ তদন্তভার গ্রহণ করে ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ সহ তদন্তকার্য অব্যাহত রাখে। ইং ২৭/১০/২০২২ তারিখ বিকাল অনুমান ০৪.১০ ঘটিকার সময় জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে জনৈক বেলাল হোসেন নামক ব্যক্তি কোতোয়ালী থানাধীন জামালখান লিচু বাগান সিকদার হোটেলের পিছনে ড্রেনের উপর বস্তাবন্দি ভিকটিমের লাশ দেখতে পেয়ে থানায় সংবাদ দেয়।
পুলিশ সংবাদ পেয়ে কোতোয়ালী থানার চৌকস টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন সহ মৃতদেহের সুরতহাল সম্পন্ন করে লাশ চমেক হাসপাতালে মর্গে প্রেরণ করে। উক্ত ঘটনায় ভিকটিমের মা বাদী হয়ে থানায় এজাহার দায়ের করলে কোতোয়ালী থানার মামলা নং-৪৯, তাং-২৮/১০/২২, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০ রুজু হয়। উক্ত মামলার তদন্তভার এসআই/মোঃ নওশের কোরেশী এর উপর অর্পণ করা হয়।
মামলাটি রুজু হওয়ার পর উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) জনাব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান মহোদয়ের সার্বিক নির্দেশনায় এডিসি (দক্ষিণ) নোবেল চাকমা, পিপিএম, এসি (কোতোয়ালী জোন) মোঃ মুজাহিদুল ইসলাম, অফিসার ইনচার্জ, জাহিদুল কবির দের নেতৃত্বে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আতিকুর রহমান, এসআই/মোঃ মোমিনুল হাসান, এসআই/এইচ এম এরশাদ উল্লাহ, এসআই/বাবলু কুমার পাল, এসআই/মোঃ নওশের কোরেশী, এসআই/মোঃ মেহেদী হাসান, এসআই/সুজন দাশ, এসআই/সুকান্ত চৌধুরী, এসআই/মৃণাল কান্তি মজুমদার, এএসআই/রণেশ বড়ুয়া, এএসআই/সাইফুল আলম, কং/২৫৬১ রুবেল মজুমদার সহ কোতোয়ালী থানার অফিসারদের নিয়ে একাধিক চৌকস টিম গঠন করা হয়। ভিকটিমের মৃতদেহ ড্রেনে পাওয়ার পর যখন বস্তা কেটে মৃতদেহটি বের করা হয় তখন আমাদের নজরে আসে বস্তাতে টিসিবি’র সীল আছে। সেই টিসিবি’র সীলকে টার্গেট করে এমন টিসিবি’র সীলযুক্ত বস্তায় মালামাল বিক্রয়ের দোকান ও আশেপাশের বিভিন্ন রেস্তোরার গোডাউনে টিসিবি’র সীলযুক্ত বস্তা খুঁজতে থাকি।
একপর্যায়ে শ্যামল ষ্টোর দোকানের গোডাউন চেক করার সময় একটি ইনটেক খালি টিসিবি’র সীলযুক্ত বস্তা খুজেঁ পাওয়া যায়। টিসিবির সীলযুক্ত বস্তাকে টার্গেট করে উক্ত দোকানে মালিক ও কোন কোন কর্মচারী কাজ করে তাদের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করি এবং ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করি। টিসিবির সীলযুক্ত বস্তা ও সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনায় আসামী লক্ষণ দাশ কে শনাক্ত পূর্বক জামালখান এলাকার শ্যামল ষ্টোর নামক দোকানের গোডাউনে অভিযান পরিচালনা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নৃশংস হত্যাকান্ডে জড়িত আসামী লক্ষণ দাশ’কে ইং ২৮/১০/২০২২ তারিখ রাত ০১.৩০ ঘটিকায় গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার পূর্বক তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করে যে, ভিকটিম মারজানা হক বর্ষা কে সে বিভিন্ন সময়ে দোকান থেকে চিপস, চকলেট দিত। ঘটনার দিন সে ভিকটিমকে ১০০/- টাকা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে ইং ২৪/১০/২০২২ তারিখ বিকাল ০৪.৪৩ ঘটিকার সময় ডাক দিয়ে দোকানের গোডাউনে নিয়ে যায়। গোডাউনে নেওয়ার পর গোডাউনের ভিতরে থাকা চৌকিতে বসিয়ে ভিকটিমের কাপড়চোপড় খুলে ফ্লোরে থাকা পেঁয়াজের খোসার উপর রাখে। পরবর্তীতে সে ভিকটিমকে চৌকিতে মুখ এবং নাক চেপে ধরে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ধর্ষণকালে ভিকটিমের যৌনাঙ্গ থেকে রক্তপাত হওয়ায় আসামী লক্ষণ দাশ ভয় পেয়ে ভিকটিমের মুখ এবং নাক চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরবর্তীতে সে তার গোডাউনে রাখা টিসিবি’র সীলযুক্ত প্লাস্টিকের বস্তার ভিতরে ভিকটিমের মৃতদেহ ঢুকায়। বস্তাবন্দি মৃতদেহটি সে বাহিরে এনে গোডাউনের ডান পাশে দেওয়াল সংলগ্ন ড্রেনে দেওয়ালের উপর দিয়ে ফেলে দেয়। এর কিছুক্ষণ পরে সে ভিকটিমের কাপড়চোপড় পেঁয়াজের খোসার বস্তার ভিতর খোসাসহ ঢুকিয়ে বস্তাটি একই জায়গায় তথা ড্রেনে ফেলে দেয়। আরো কিছুক্ষণ পরে সে ভিকটিমের ব্যবহৃত স্যান্ডেলটি নিয়ে ড্রেনে ফেলে দেয়। এভাবেই একটি লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন করে টিম কোতোয়ালী।
লক্ষণ দাশ (৩০), পিতা-ফেলোরাম দাশ, মাতা-নিলু দাশ, সাং-উত্তর পদুয়া, ৩নং ওয়ার্ড, মনি মিস্ত্রির বাড়ি, থানা-লোহাগাড়া, জেলা-চট্টগ্রাম বর্তমানে-জামালখান, সিকদার হোটেলের পাশে, গোপাল মুহুরীর গলি, এ কে এম জামাল উদ্দিনের বিল্ডিং, নিচ তলা, শ্যামল ষ্টোর নামক দোকানের গোডাউন, থানা-কোতোয়ালী, জেলা-চট্টগ্রাম।