শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, ০৪:০২ অপরাহ্ন
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের(চসিক)প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পেলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।
মঙ্গলবার (৪ আগস্ট)দুপুরে সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এক সংবাদ বিফ্রিংয়ে একথা জানান।জানা গেছে,চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের মেয়াদ আছে আর মাত্র একদিন।
তবে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে হচ্ছে না নির্বাচন।তাই আইন অনুযায়ী মেয়রের চেয়ারে বসে অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব পালন করবেন এই প্রশাসক।
স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন,২০০৯-এর ২৫ (১) ধারায় বলা আছে,সিটি করপোরেশন মেয়াদোত্তীর্ণ হলে সরকার সিটি করপোরেশন গঠিত না হওয়া পর্যন্ত এর কার্যক্রম সম্পাদনের উদ্দেশ্যে একজন উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবে।
একই আইনের ২৫ (২)ধারায় বলা হয়েছে,সরকার প্রয়োজনবোধে যথাযথ বলে বিবেচিত হয়- এমন সংখ্যক সদস্য সমন্বয়ে গঠিত কমিটিকে প্রশাসকের কর্মসম্পাদনে সহায়তার জন্য নিয়োগ করতে পারবে।আর ২৫ (৩)ধারায় বলা হয়েছে,প্রশাসক এবং কমিটির সদস্যরা যথাক্রমে মেয়র ও কাউন্সিলরের ক্ষমতা প্রয়োগ এবং দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।
নিয়মানুযায়ী মেয়াদপূর্তির ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে।সে হিসাবে ২৯ মার্চ ভোটের তারিখ নির্ধারণ করে নির্বাচন কমিশন তফসিলও ঘোষণা করেছিল।কিন্তু করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ভোটের এক সপ্তাহ আগে ২১ মার্চ নির্বাচন স্থগিত করেন ইসি।
মঙ্গলবার দুপুরে প্রশাসক পদে সুজনের নাম ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় খোরশেদ আলম সুজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ কথা বলেন।
এই দায়িত্ব দেওয়ায় আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সুজন বলেন, “দীর্ঘদিন আমি প্রয়াত মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সাথে কাজ করেছি। উনার ছায়াসঙ্গী হয়ে ছিলাম। দেখেছি কীভাবে নগরীর উন্নয়নে কাজ করতে হয়। চট্টগ্রামবাসীর সমস্যা-সঙ্কট, হাঁড়ির খবর আমি জানি। উনার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমি কাজ করব।”
চট্টগ্রামের মেয়র পদে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে বুধবার। নিয়ম অনুযায়ী, মেয়াদপূর্তির ১৮০ দিনের মধ্যে এ সিটির নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। সে অনুযায়ী ২৯ মার্চ ভোটের তারিখ রেখে তফসিলও দিয়েছিল ইসি।
কিন্তু মহামারীর কারণে ভোটের সপ্তাহ খানেক আগে ২১ মার্চ তা স্থগিত করা হয়। সেই নির্বাচন আর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করতে না পারায় মঙ্গলবার চট্টগ্রাম সিটিতে প্রশাসক নিয়োগের কথা জানান স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
ঢাকায় সচিবালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভ-সভাপতি মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজনকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি ছাত্র রাজনীতি করেছেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেছেন, রাজনীতিতে সব সময় সক্রিয় ছিলেন।
২০১৭ সালে এক অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী। তার এক পাশে (ছবিতে ডান দিকে) খোরশেদ আলম সুজন, অন্যপাশে বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন
সুজনকে একজন ‘বিজ্ঞ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব’ হিসেবে বর্ণনা করে তাজুল বলেন, “সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী সাহেবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে সিটি করপোরেশনের অনেক ব্যাপারেই তিনি অবহিত। সৎ ও আদর্শবান মানুষ হিসেবেও তার বেশ প্রচার আছে। এ বিষয়গুলোই হয়ত প্রধানমন্ত্রী আমলে নিয়েছেন।”
মহামারীর কারণে স্থগিত হওয়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় মনোনায়ন চেয়েছিলেন খোরশেদ আলম সুজন। তবে দল মনোনয়ন দেয় নগর কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরীকে।
মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম ক্লাবে যখন শেষবারের মত বাজেট ঘোষণা শেষ করলেন বিদায়ী মেয়র নাছির, তার কিছুক্ষণ পরই প্রশাসক পদে সুজনের নিয়োগের ঘোষণা আসে।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন (সিটি করপোরেশন) আইনের ২৫ ধারা অনুযায়ী, সময়মত নির্বাচন করতে না পারলে মেয়াদোত্তীর্ণ সিটি করপোরেশনে একজন ‘উপযুক্ত ব্যক্তি বা কোনো কর্মকর্তাকে’ প্রশাসক নিয়োগ দিতে পরে সরকার। তবে সেই প্রশাসক ১৮০ দিনের বেশি দায়িত্বে থাকতে পারেন না।
এর আগে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে দেখা গেছে নির্বাচনে বিলম্বের কারণে তিন বছরের বেশি সময়ও সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে কাজ চালানো হয়েছে। তবে আইনের ওই বিধিনিষেধের কারণে ১৮০ দিন পর পর প্রশাসক বদলে দেওয়া হয়েছে।
সেই হিসেবে বলা যায়, এর মধ্যে ভোটের নতুন তারিখ নির্ধারণ করা না হলে চট্টগ্রাম সিটির প্রশাসক হিসেবে সুজন হাতে পাচ্ছেন সর্বোচ্চ ছয় মাস।
চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরীর নির্বাচনী প্রচারে খোরশেদ আলম সুজন
‘সুবিধাজনক সময়ে’ মন্ত্রণালয় অনুরোধ করলে নির্বাচন কমিশন ভোটের তারিখ নির্ধারণ করবে। সেক্ষেত্রে বর্তমান প্রার্থীরাই বহাল থাকবেন এবং যেখানে ভোট স্থগিত হয়েছিল সে অবস্থা থেকে নির্বাচন হবে। অর্থাৎ, ওই নির্বাচনে এম রেজাউল করিম চৌধুরীই আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী থাকবেন।
ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী রাজনীতিতে যুক্ত থাকা সুজন চট্টগ্রামের রাজনীতিতে ‘বঞ্চিত’ নেতা হিসেবেই পরিচিত। নগরীর বন্দর-পতেঙ্গা সংসদীয় আসনে একাধিকবার মনোনয়ন চেয়েও তিনি পাননি।
নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরীর ‘ছায়াসঙ্গী’ সুজন পরে একসময় নাছিরের কাছাকাছিও এসেছিলেন।
১৯৭০ সালে ছাত্রলীগে যোগ দেওয়া সুজন দুই বছরের মাথায় কাট্টলী ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করার পর ১৯৭৬ সালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ভর্তি হন এবং সেখানে ছাত্রলীগ সংগঠিত করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন।
গত বছর পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে এক কর্মসূচিতে খোরশেদ আলম সুজন
এক পর্যায়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন সুজন। সমাজতত্ত্বে স্নাতকোত্তর শেষ করে তিনি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
১৯৮২-৮৪ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করা সুজন পরে যোগ দেন বাকশালের জাতীয় ছাত্রলীগে; ১৯৮৬-৮৮ মেয়াদে সংগঠনের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন।
কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সদস্য হয়ে সে সময় এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখা সুজনকে দুইবার কারাগারেও যেতে হয়।
১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের অসহযোগ আন্দোলনের সময় চট্টগ্রাম বন্দর অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে সুজন ছিলেন সামনের সারিতে।
শ্রমিক আন্দোলন ও বন্দরকেন্দ্রিক আন্দোলনে মহিউদ্দিনের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন সুজন। ‘অনলবর্ষী বক্তা’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া এই আওয়ামী লীগ নেতা শেষ কয়বছর বিভিন্ন নাগরিক আন্দোলনেও নেতৃত্ব দিয়েছেন।
সবশেষ করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হলে নগরীতে চিকিৎসা সেবার নানা সংকট নিয়েও সামাজিক আন্দোলনে তৎপর ছিলেন সুজন।