শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৩০ অপরাহ্ন
পেকুয়ার সন্তান ফাহিমের সাফল্য : এক জোড়া কবুতর থেকে দুইটি খামারের।
আমিরুল ইসলাম রাশেদ, পেকুয়া প্রতিনিধি
মানুষের জীবনে বিভিন্ন ধরণের শখ থাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে সমাজেকে পরিচয় করিয়ে দেয়। বিভিন্ন পশু পাখি লালন-পালন করা অনেকের ব্যক্তিগত শখ। কিন্তু সেই শখ কখনও কখনও জীবনের অর্থনীতির চাকাকে সাফল্যের স্থানে নিয়ে যেতে পারে তার উদাহরণ এইচ এম ফাহিম।
তিনি কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের চৌমহুনী আদর্শ পাড়া গ্রামের জেএম শাহাব উদ্দিনের সন্তান ও চট্টগ্রামস্থ সাউর্দান ইউনিভার্সিটি এলএলবিতে অধ্যায়নরত।
জানা গেছে, ২০০৮ সাল। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন ফাহিম। পিতা মাতার টিফিনের জন্য দেয়া জমানো ৪শ টাকা দিয়ে কিনলেন এক জোড়া দেশি জাতের কবুতর। সেই ৪শ টাকার এক জোড়া কবুতর থেকে ২০২০ সালে এসে চৌমহুনীর পিতার বাড়িতে একটি বিভিন্নজাতের কবুতরসহ পাখির খামার ও চট্টগ্রামের বাসায়ও একটি খামার গড়ে তুলেন। দুটি খামারে ইতোমধ্যে প্রায় ৮লাখ টাকার পুঁজি রয়েছে। নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি প্রতিমাসে তিনি আয় করেন ৪০ থেকে ৫০হাজার টাকা। বর্তমানে বিভিন্ন ধরণের কবুতর পালনের পাশাপাশি প্রচলিত পাখি, মাছ ও ফেন্সি মুরগীর খামার গড়ে তুলেছেন। সর্বশেষ লকডাউনের দুই মাসে এ সমস্ত খামার থেকে ১লাখ ২০হাজার উপরে আয় করেছেন। তার স্বপ্ন একদিন অনেক বড় উদ্যোক্তা হয়ে লাখো মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির।
সফলতার গল্প শুনাতে গিয়ে কলেজ ছাত্র ফাহিম বলেন, আমার সূচনা লগ্ন ছিলো ২০০৮ সাল থেকে। যখন আমি চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ছিলাম। একদম ছোটকাল থেকে কেন জানি পশুপাখির প্রতি অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করতো। সর্বপ্রথম আমি ৪০০টাকা দিয়ে একজোড়া দেশি কবুতর নিয়ে যাত্রা শুরু করি।দেশি কবুতর থেকে দিন দিন ক্রমান্বয়ে কবুতরের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এতে আমার আগ্রহ আরো বেড়ে যায়। তারই ধারাবাহিকতায় শুরু হয় বৃহৎ এর দিকে পথচলা। কিন্তু তারে মাঝে সহ্য করতে হয়েছে পরিবার এবং বিভিন্ন সামাজিক বাঁধার। তারপরও পশু পাখির প্রতি ভালোবাসা বাড়তে থাকা ও সংগ্রহ বড় করায় আমি বন্ধু-বান্ধব এবং বিভিন্ন মহলের কাছে হাসি-তামাশার পাত্র হয়ে ওঠি। তারপরও নিজেকে নিজের কাজে অটল রেখে তারই হাত ধরে আমি বর্তমানে দুটি খামারের মালিক।একটি চট্টগ্রাম বহদ্দারহাটে অপরটি পেকুয়ার বাড়িতে।
দেশি কবুতর দিয়ে আমার কর্ম চলা শুরু হলেও বর্তমানে আমার খামারে নেই সেই আগের দেশি কবুতর। বর্তমানে রয়েছে বিভিন্ন জাতের উন্নত কবুতর। যেমন করমোনা, ফিলব্যাক, রেচার, জ্যাকোবিন, কিং, জার্মান ব্লেজার,লাহুরি সিরাজি সহ আরো বেশ কয়েক প্রকার।
এছাড়া্র পাখি রয়েছে বাজরিকা, কোকোটেল, লাভবার্ড, রিংনেক, অস্ট্রেলিয়ান ঘুঘু।
ফেন্সি মুরগীর মধ্যে রয়েছে, মালয়েশিয়ান সেরেমা, কাদাকনাথ, সরাইল। তার সাথে রয়েছে মিশ্র মাছের প্রজেক্ট।
তিনি আরো বলেন, এই সফলতার পিছনে আমি কোন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা পায়নি। তারপরও আলহামদুলিল্লাহ বর্তমানে আমি সফল। এখন চিন্তাধারা বেকারদের অনুপ্রাণিত করব, স্বপ্ন একদিন অনেক বড় উদ্যোক্তা হবো লাখো মানুষের কর্মসংস্থান করবো।
শিক্ষিত বেকারদের উদ্দেশ্য করে ফাহিম বলেন, পড়াশোনার ব্যস্থতা এবং পরিবারের সার্পোট না থাকার কারণে এবিষয়ে তেমন সময় দিতে পারার মাঝেও দুইটি খামার গড়ে তুলেছি। লকডাউনের ফলে সময় দিতে পেরেছি যার কারণে কিছুটা সফলতা পেয়েছি।
বর্তমানে সময়ে অধিকাংশ ছেলে আমার দেখামতে রাজনৈতিক, মাদক, মোবাইল ইত্যাদি নিয়ে সময় কাটাই তাদের প্রতি আমার পরামর্শ আপনারা এসব বাদ দিয়ে দুইজোড়া কবুতর আর পাখি পালন করেন। আশাকরি আপনাকে এসব কাজ থেকে বিরত রাখবে। একই সাথে আয়ের পথ ও সৃষ্টি করে দিবে।
বর্তমান সময়ে কবুতর-পাখি পালন একধরনের শখ এবং ব্যবসাও বটে। বেকারদের প্রতি অনুরোধ আপনি চাকরির পেছনে না দৌঁড়ে আপনি একজন উদ্যোক্তা হন এতে আপনার চাকরির চেয়ে অনেক বেশি আয় হবে। নিজের যেমন কর্মসংস্হান হবে তেমনি অন্যেরও হবে। কারণ বর্তমানে খাঁচায় কবুতর পালন করা যায়। এতে সময়ও বেশি দিতে হয় না। বাড়ির বেল-খনি, ছাদে অল্প জায়গায় করা যায়। অল্প জায়গা ও কম পুঁজি দিয়ে শুরু করা সম্ভব। অনলাইনে বেচাঁ কেনার পদ্ধতি যেকোন পরামর্শ খুব সহজে পাওয়া যায়। যা অনেকটা ঝামেলা মুক্ত। এই গুলো বেচাঁ কেনা ও পরামর্শের জন্য অনলাইনে অনেক গ্রুপ রয়েছে। শুধু কবুতর, পাখি,ফেন্সি মুরগী না, আপনি ছাদে বাগানও করতে পারেন।
কবুতর,পাখি এই সৌখিন জিনিস গুলো পালন করতে গিয়ে আপনার বন্ধু-বান্ধব এমনি কি আপনার আপনজনও ট্রল করতে পারে। এসবে কান দিবেন না। কাজে নেমে পড়ুন ইনশাআল্লাহ বেশি টাইম লাগবে না আপনার সফলতা আসতে।
উল্লেখ্যঃ এইচএম ফাহিম পেকুয়া জিএমসি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, চট্টগ্রামস্থ হাজেরা তুজু কলেজ থেকে এইচএসসি ও সাউর্দান ইউনিভার্সিটি এলএলবিতে অধ্যায়নরত। তার পিতা জেএম শাহাব উদ্দিন স্বাস্থ্য বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তিনি চার বোন দুই ভাইয়ের মধ্যে চতুর্থ। তার স্বপ্ন সরকারী ও বেসরকারী সহায়তায় বেকার শিক্ষিত যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এবং নিজে সফল উদ্যোক্তা হওয়া।